০৭:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

শাপলা ফোটা নয়নাভিরাম আড়িয়াল বিল

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৬:১০:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ৭৭৩ বার পড়া হয়েছে

bdopennews

তুলসিখালী ব্রিজের উপর থেকে দুপাশে তাকাতেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সেতুটি লেভেল থেকে বেশ উঁচুতে। ধনুকের মত বাঁকা। মেঝে দিয়ে বয়ে চলেছে ধলেশ্বরী। সবে বর্ষা গেছে। নদীর যৌবনে সময় কেটে যাবে জোয়ারের স্রোতের মতো। বড় বড় বার্জ এবং বালুকাময় বাল্কহেডগুলি ঘোলা জলে ভাসছে, প্রপেলারগুলি মন্থন করছে। মাঝে মাঝে দু-একটি ছোট-বড় নৌকাও দেখা যায়। কিন্তু সামনের দিকে তাকালে নদীর সৌন্দর্য ছেয়ে যায়। ডানে-বামে অজস্র শাপলা ছড়িয়ে আছে আর আড়িয়াল বিল চোখে পড়ার মতো। কেরানীগঞ্জ থেকে দুই লেনের পিচঢালা সড়ক চলে গেছে নবাবগঞ্জের দিকে। রাস্তাটি কিছুক্ষণ আগে সংস্কার করা হয়েছে এবং এখনও বেশ মসৃণ রয়েছে। কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর বাজার মোড় থেকে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম। সিএনজি চালিত স্কুটার এবং ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা এই রুটে প্রধান গণপরিবহন। আর মোটরসাইকেল চলে যায়। গুলিস্তান থেকে দোহার-নবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় নবখালী পরিবহনের বাস। তবে সংখ্যায় কম। তাই নবাবগঞ্জের রোহিতপুর থেকে টিকারপুর পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক যানজটমুক্ত থাকে। আমি কয়েকদিন ধরে নবাবগঞ্জ-দোহার এই রুটে যাতায়াত করছি। মাথার উপর উদার শরতের আকাশ। নীল পটভূমিতে বিভিন্ন আকারের সাদা মেঘ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভেসে যায় চর্যাচর সূর্যের আলোয়। তুলসিখালী থেকে খরশুর ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় 10 কিলোমিটার রাস্তা চলে গেছে আড়িয়াল বিলে। মাঝখানে আরেকটি বড় সেতু আছে। এটি মহাকাব্য কায়কোবাদ সেতু। মহাকবিরের বাড়ি এই এলাকায়। আসল বিলটি আসলে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় পড়ছে। দেশের মধ্যাঞ্চলে এটিই সবচেয়ে বড় বিল। এলাকাটি প্রায় 260 বর্গ মাইল। জমির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ একর। পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মধ্যবর্তী বিশাল বিলের প্রভাব পড়েছে পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলায়ও। এ দুই উপজেলার অধিকাংশ এলাকা নিচু; বর্ষা ও শরৎকালে বন্যা হয়। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় আড়িয়াল বিলের একাংশ ধসে পড়েছে। নবাবগঞ্জের রাস্তাটি বিলের অংশ দিয়ে গেছে। খুব চোখ ধাঁধানো দৃশ্য এখন আরিয়াল বিলে। রাস্তার দুপাশে দিগন্ত ছুঁয়ে যাওয়া জলাভূমিগুলো গোলাকার পাতা, কচুরিপানা, কচুরিপানাসহ নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদে ছেয়ে গেছে। কোথাও ঘন ঝোপের মতো দেখায়। দূরে কয়েকটা হিজল গাছ। মাঝে মাঝে বিলের শান্ত ও স্বচ্ছ বিল রোদে ঝলমল করে। বাঁশের খুঁটিতে বসে থাকা লাউরা হঠাৎ ডানা মেলে মাছের প্রত্যাশায় লাফিয়ে উঠল। ছাগল পাতায় সাবধানে এগিয়ে যায়। এবং কালো ফিঞ্চরা ফড়িংদের পিছনে তাড়া করে এবং বিলের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে বৈদ্যুতিক তারে তাদের লেজ নাচায়। এখন শুরু হয়েছে শরতের অনন্য উপহার ফুল ফোটার মৌসুম। হাজার ফোঁটা আর আধফোঁটা দিয়ে আর্যল বিল যেভাবে শোভা পাচ্ছে তা বর্ণনা করা অসম্ভব। পথটাও সুন্দর। দুপাশে বন্য লতা ঝোপ গজিয়েছে। এটিতে হলুদ, বেগুনি, গোলাপী – বিভিন্ন রঙের নামহীন ফুল রয়েছে। তেলাপোকার সাদা ফুল আকারে কিছুটা বড় হয়। শক্ত কান্ডের ঝোপগুলি কোকল লতা দিয়ে আবৃত থাকে এবং সেগুলিতে কয়েক ডজন সাদা ফুল ফোটে। গাছপালাও রয়েছে বেশ বৈচিত্র্যময়। তুলসিখালির পর দুপাশে সারিবদ্ধ তালগাছ, সামনে সারি সারি কলাগাছ, তারপর আবার একদল লতাপাতা- এভাবেই প্রায় চলে গেল টিকরপুর পর্যন্ত। খাররোড বিলের জলীয় বাষ্প, বুনো ফুলের ঘ্রাণ, ভেজা মাটির গন্ধ—সব মিলিয়ে এক অন্যরকম ভেষজ ঘ্রাণ ভেসে আসে সমগ্র জলজ প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে। বর্ষা বিদায় নিলেও বৃষ্টি পুরোপুরি যায়নি। ফলস্বরূপ, গাছ এবং পাতাগুলি ধুলো এবং বালি থেকে মুক্ত। পরিষ্কার স্পন্দনশীল সবুজ সঙ্গে সুগন্ধি. কোথাও নোংরা, শুষ্কতার চিহ্ন নেই। জীবন-প্রাচুর্যের এই মহান ঔজ্জ্বল্য মনের অশুচিতাকেও ধুয়ে মুছে দেয়, প্রস্ফুটিত ফুলের মতো প্রফুল্ল করে তোলে।

দিনে দিনে দৃশ্যপট ভিন্ন। সাদা মেঘগুলো তখন পশ্চিমে পতিত সূর্যের লাল আভায় বহু রঙের হয়ে ওঠে। দিগন্ত থেকে ক্রমশ নেমে আসে অন্ধকার। এ দৃশ্য উপভোগ করতে বড় ব্রিজের আশেপাশে ভিড় জমান বহু মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসে। পাশ দিয়ে যাওয়া কয়েকজন বাইকার কিছুক্ষণের জন্য থামল। শেষ বিকেলের সূর্যের সাথে সোনালী আলোয় ছুটে আসে ধলেশ্বরী স্রোত।

আড়িয়াল বিলের সৌন্দর্য যেমন শ্বাসরুদ্ধকর তেমনি উন্নয়নকামীদের দৃষ্টিতে এর অস্তিত্বও গুরুত্বপূর্ণ। 15,000 একর জমিতে এখানে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ২০১১ সালে জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শুরু হয়। পরে আরিয়াল বিল রক্ষা কমিটি তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বিলের রক্ষকরা জানান, বিলের জমিতে প্রতি একরে প্রায় ১০০ মণ ধান উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া এখানে জলাতঙ্ক, মাছ ও শামুক প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ কৃষিকাজ করে এবং এসব প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বিল না হলে তারা তাদের জীবিকা হারাবে। তাদের বাঁচতে হবে। সেজন্য প্রতিবাদ ছিল জোরালো। আমার মনে আছে যে 31 জানুয়ারি,

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

শাপলা ফোটা নয়নাভিরাম আড়িয়াল বিল

আপডেট সময় ০৬:১০:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

তুলসিখালী ব্রিজের উপর থেকে দুপাশে তাকাতেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সেতুটি লেভেল থেকে বেশ উঁচুতে। ধনুকের মত বাঁকা। মেঝে দিয়ে বয়ে চলেছে ধলেশ্বরী। সবে বর্ষা গেছে। নদীর যৌবনে সময় কেটে যাবে জোয়ারের স্রোতের মতো। বড় বড় বার্জ এবং বালুকাময় বাল্কহেডগুলি ঘোলা জলে ভাসছে, প্রপেলারগুলি মন্থন করছে। মাঝে মাঝে দু-একটি ছোট-বড় নৌকাও দেখা যায়। কিন্তু সামনের দিকে তাকালে নদীর সৌন্দর্য ছেয়ে যায়। ডানে-বামে অজস্র শাপলা ছড়িয়ে আছে আর আড়িয়াল বিল চোখে পড়ার মতো। কেরানীগঞ্জ থেকে দুই লেনের পিচঢালা সড়ক চলে গেছে নবাবগঞ্জের দিকে। রাস্তাটি কিছুক্ষণ আগে সংস্কার করা হয়েছে এবং এখনও বেশ মসৃণ রয়েছে। কেরানীগঞ্জের রোহিতপুর বাজার মোড় থেকে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম। সিএনজি চালিত স্কুটার এবং ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা এই রুটে প্রধান গণপরিবহন। আর মোটরসাইকেল চলে যায়। গুলিস্তান থেকে দোহার-নবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় নবখালী পরিবহনের বাস। তবে সংখ্যায় কম। তাই নবাবগঞ্জের রোহিতপুর থেকে টিকারপুর পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক যানজটমুক্ত থাকে। আমি কয়েকদিন ধরে নবাবগঞ্জ-দোহার এই রুটে যাতায়াত করছি। মাথার উপর উদার শরতের আকাশ। নীল পটভূমিতে বিভিন্ন আকারের সাদা মেঘ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ভেসে যায় চর্যাচর সূর্যের আলোয়। তুলসিখালী থেকে খরশুর ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় 10 কিলোমিটার রাস্তা চলে গেছে আড়িয়াল বিলে। মাঝখানে আরেকটি বড় সেতু আছে। এটি মহাকাব্য কায়কোবাদ সেতু। মহাকবিরের বাড়ি এই এলাকায়। আসল বিলটি আসলে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় পড়ছে। দেশের মধ্যাঞ্চলে এটিই সবচেয়ে বড় বিল। এলাকাটি প্রায় 260 বর্গ মাইল। জমির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ একর। পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মধ্যবর্তী বিশাল বিলের প্রভাব পড়েছে পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলায়ও। এ দুই উপজেলার অধিকাংশ এলাকা নিচু; বর্ষা ও শরৎকালে বন্যা হয়। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় আড়িয়াল বিলের একাংশ ধসে পড়েছে। নবাবগঞ্জের রাস্তাটি বিলের অংশ দিয়ে গেছে। খুব চোখ ধাঁধানো দৃশ্য এখন আরিয়াল বিলে। রাস্তার দুপাশে দিগন্ত ছুঁয়ে যাওয়া জলাভূমিগুলো গোলাকার পাতা, কচুরিপানা, কচুরিপানাসহ নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদে ছেয়ে গেছে। কোথাও ঘন ঝোপের মতো দেখায়। দূরে কয়েকটা হিজল গাছ। মাঝে মাঝে বিলের শান্ত ও স্বচ্ছ বিল রোদে ঝলমল করে। বাঁশের খুঁটিতে বসে থাকা লাউরা হঠাৎ ডানা মেলে মাছের প্রত্যাশায় লাফিয়ে উঠল। ছাগল পাতায় সাবধানে এগিয়ে যায়। এবং কালো ফিঞ্চরা ফড়িংদের পিছনে তাড়া করে এবং বিলের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে বৈদ্যুতিক তারে তাদের লেজ নাচায়। এখন শুরু হয়েছে শরতের অনন্য উপহার ফুল ফোটার মৌসুম। হাজার ফোঁটা আর আধফোঁটা দিয়ে আর্যল বিল যেভাবে শোভা পাচ্ছে তা বর্ণনা করা অসম্ভব। পথটাও সুন্দর। দুপাশে বন্য লতা ঝোপ গজিয়েছে। এটিতে হলুদ, বেগুনি, গোলাপী – বিভিন্ন রঙের নামহীন ফুল রয়েছে। তেলাপোকার সাদা ফুল আকারে কিছুটা বড় হয়। শক্ত কান্ডের ঝোপগুলি কোকল লতা দিয়ে আবৃত থাকে এবং সেগুলিতে কয়েক ডজন সাদা ফুল ফোটে। গাছপালাও রয়েছে বেশ বৈচিত্র্যময়। তুলসিখালির পর দুপাশে সারিবদ্ধ তালগাছ, সামনে সারি সারি কলাগাছ, তারপর আবার একদল লতাপাতা- এভাবেই প্রায় চলে গেল টিকরপুর পর্যন্ত। খাররোড বিলের জলীয় বাষ্প, বুনো ফুলের ঘ্রাণ, ভেজা মাটির গন্ধ—সব মিলিয়ে এক অন্যরকম ভেষজ ঘ্রাণ ভেসে আসে সমগ্র জলজ প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে। বর্ষা বিদায় নিলেও বৃষ্টি পুরোপুরি যায়নি। ফলস্বরূপ, গাছ এবং পাতাগুলি ধুলো এবং বালি থেকে মুক্ত। পরিষ্কার স্পন্দনশীল সবুজ সঙ্গে সুগন্ধি. কোথাও নোংরা, শুষ্কতার চিহ্ন নেই। জীবন-প্রাচুর্যের এই মহান ঔজ্জ্বল্য মনের অশুচিতাকেও ধুয়ে মুছে দেয়, প্রস্ফুটিত ফুলের মতো প্রফুল্ল করে তোলে।

দিনে দিনে দৃশ্যপট ভিন্ন। সাদা মেঘগুলো তখন পশ্চিমে পতিত সূর্যের লাল আভায় বহু রঙের হয়ে ওঠে। দিগন্ত থেকে ক্রমশ নেমে আসে অন্ধকার। এ দৃশ্য উপভোগ করতে বড় ব্রিজের আশেপাশে ভিড় জমান বহু মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ আসে। পাশ দিয়ে যাওয়া কয়েকজন বাইকার কিছুক্ষণের জন্য থামল। শেষ বিকেলের সূর্যের সাথে সোনালী আলোয় ছুটে আসে ধলেশ্বরী স্রোত।

আড়িয়াল বিলের সৌন্দর্য যেমন শ্বাসরুদ্ধকর তেমনি উন্নয়নকামীদের দৃষ্টিতে এর অস্তিত্বও গুরুত্বপূর্ণ। 15,000 একর জমিতে এখানে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। ২০১১ সালে জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শুরু হয়। পরে আরিয়াল বিল রক্ষা কমিটি তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বিলের রক্ষকরা জানান, বিলের জমিতে প্রতি একরে প্রায় ১০০ মণ ধান উৎপন্ন হয়। এ ছাড়া এখানে জলাতঙ্ক, মাছ ও শামুক প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ কৃষিকাজ করে এবং এসব প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বিল না হলে তারা তাদের জীবিকা হারাবে। তাদের বাঁচতে হবে। সেজন্য প্রতিবাদ ছিল জোরালো। আমার মনে আছে যে 31 জানুয়ারি,