Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/bdopenne/public_html/wp-content/themes/newsflashpro/inc/template-functions.php on line 458
দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় সমবায় অধিদপ্তরের উদ্যোগ - Open News
১০:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় সমবায় অধিদপ্তরের উদ্যোগ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:৪০:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৬ বার পড়া হয়েছে

আগামী শনিবার (১ নভেম্বর) পালিত হতে যাচ্ছে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য— ‘সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়।’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলাগুলোয় দুধ উৎপাদন বাড়াতে সমবায় অধিদপ্তর কাজ করছে জোরেশোরে।

দেশের ৫৬টি দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় উন্নত সংকর জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি ও নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাই এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

‘দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণ (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৩৮১.৭৩ লাখ টাকা, যা পুরোপুরি সরকারিভাবে অর্থায়িত। প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ১৫০ জন উপকারভোগী রয়েছেন— এর মধ্যে ৫১ শতাংশ নারী।

প্রকল্পের লক্ষ্য

সমবায় অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতিটি উপজেলায় বছরে গড়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন বাড়ানো, উপকারভোগীদের কর্মসংস্থান তৈরি এবং নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য।

এ জন্য উপজেলাভিত্তিক সমবায় সমিতি গঠন, গাভী পালনে প্রশিক্ষণ, ঋণ সুবিধা প্রদান ও দুগ্ধ বিপণন কাঠামো উন্নয়নসহ নানা কার্যক্রম চলছে।

চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠপর্যায়ে কিছু খামারিরা নানা সমস্যার মুখে পড়েছেন।
গো-খাদ্যের উচ্চমূল্য, ফ্রিজিয়ান জাতের গাভীর রোগপ্রবণতা, বাজারে দুধের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, চিলিং সেন্টারের অভাব এবং পর্যাপ্ত মনিটরিং না থাকা— এসব কারণেই অনেক খামারি দুধ উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

ফিরোজা বেগম, সবিতা রানী ও রতন বাবু নামের কয়েকজন খামারি জানান, দুধের দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় তারা লোকসান গুনছেন। আবার অনেকে সমবায়ের সুবিধা না পেয়ে হতাশ।

সমাধানে নতুন উদ্যোগ

প্রকল্প পরিচালক জানান, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ডিপিপি সংশোধন করে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে—

  • খামারিদের জন্য বাড়তি প্রশিক্ষণ।
  • বিনা মূল্যে ঘাসের বীজ বিতরণ।
  • ফ্রিজিয়ানের পরিবর্তে স্থানীয় উপযোগী সংকর জাতের গাভী পালনের সুযোগ।
  • নতুন চিলিং প্লান্ট স্থাপন।
  • দুধজাত পণ্য (দই, ঘি, পনির ইত্যাদি) উৎপাদনে প্রশিক্ষণ।
  • ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (MoU)।
  • ঋণের কিস্তি পরিশোধে সময়সীমা ১৫ মাস পর্যন্ত বাড়ানো।
  • গাভীর বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস ও জৈব সার উৎপাদন প্রশিক্ষণ।
  • সফটওয়্যারভিত্তিক মনিটরিং ব্যবস্থা।

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই খামারিরা শুধু দুধ বিক্রেতা নয়, উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠুক। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও নারী ক্ষমতায়ন বাড়বে।”

সমবায়ের শক্তি, পুষ্টির নিশ্চয়তা

দেশের দুধ উৎপাদন চাহিদার তুলনায় এখনও কম। তবে সমবায় ভিত্তিক উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে আঞ্চলিক বৈষম্য কমবে, পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে এবং বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

জাতীয় সমবায় দিবসের প্রাক্কালে এই প্রকল্প যেন সত্যিকার অর্থে ‘সাম্য ও সমতায় দেশ গড়ার’ বাস্তব প্রতিচ্ছবি হয়— সেই প্রত্যাশা এখন খামারি থেকে নীতিনির্ধারক—সবারই।

নিউজটি শেয়ার করুন

দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় সমবায় অধিদপ্তরের উদ্যোগ

আপডেট সময় ০৪:৪০:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

আগামী শনিবার (১ নভেম্বর) পালিত হতে যাচ্ছে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য— ‘সাম্য ও সমতায়, দেশ গড়বে সমবায়।’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলাগুলোয় দুধ উৎপাদন বাড়াতে সমবায় অধিদপ্তর কাজ করছে জোরেশোরে।

দেশের ৫৬টি দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় উন্নত সংকর জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি ও নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করাই এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

‘দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় দুগ্ধ সমবায়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণ (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত। ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৩৮১.৭৩ লাখ টাকা, যা পুরোপুরি সরকারিভাবে অর্থায়িত। প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ১৫০ জন উপকারভোগী রয়েছেন— এর মধ্যে ৫১ শতাংশ নারী।

প্রকল্পের লক্ষ্য

সমবায় অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতিটি উপজেলায় বছরে গড়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন বাড়ানো, উপকারভোগীদের কর্মসংস্থান তৈরি এবং নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য।

এ জন্য উপজেলাভিত্তিক সমবায় সমিতি গঠন, গাভী পালনে প্রশিক্ষণ, ঋণ সুবিধা প্রদান ও দুগ্ধ বিপণন কাঠামো উন্নয়নসহ নানা কার্যক্রম চলছে।

চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠপর্যায়ে কিছু খামারিরা নানা সমস্যার মুখে পড়েছেন।
গো-খাদ্যের উচ্চমূল্য, ফ্রিজিয়ান জাতের গাভীর রোগপ্রবণতা, বাজারে দুধের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, চিলিং সেন্টারের অভাব এবং পর্যাপ্ত মনিটরিং না থাকা— এসব কারণেই অনেক খামারি দুধ উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

ফিরোজা বেগম, সবিতা রানী ও রতন বাবু নামের কয়েকজন খামারি জানান, দুধের দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে কম হওয়ায় তারা লোকসান গুনছেন। আবার অনেকে সমবায়ের সুবিধা না পেয়ে হতাশ।

সমাধানে নতুন উদ্যোগ

প্রকল্প পরিচালক জানান, এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ডিপিপি সংশোধন করে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে—

  • খামারিদের জন্য বাড়তি প্রশিক্ষণ।
  • বিনা মূল্যে ঘাসের বীজ বিতরণ।
  • ফ্রিজিয়ানের পরিবর্তে স্থানীয় উপযোগী সংকর জাতের গাভী পালনের সুযোগ।
  • নতুন চিলিং প্লান্ট স্থাপন।
  • দুধজাত পণ্য (দই, ঘি, পনির ইত্যাদি) উৎপাদনে প্রশিক্ষণ।
  • ব্র্যাকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (MoU)।
  • ঋণের কিস্তি পরিশোধে সময়সীমা ১৫ মাস পর্যন্ত বাড়ানো।
  • গাভীর বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস ও জৈব সার উৎপাদন প্রশিক্ষণ।
  • সফটওয়্যারভিত্তিক মনিটরিং ব্যবস্থা।

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই খামারিরা শুধু দুধ বিক্রেতা নয়, উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠুক। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও নারী ক্ষমতায়ন বাড়বে।”

সমবায়ের শক্তি, পুষ্টির নিশ্চয়তা

দেশের দুধ উৎপাদন চাহিদার তুলনায় এখনও কম। তবে সমবায় ভিত্তিক উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে আঞ্চলিক বৈষম্য কমবে, পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে এবং বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

জাতীয় সমবায় দিবসের প্রাক্কালে এই প্রকল্প যেন সত্যিকার অর্থে ‘সাম্য ও সমতায় দেশ গড়ার’ বাস্তব প্রতিচ্ছবি হয়— সেই প্রত্যাশা এখন খামারি থেকে নীতিনির্ধারক—সবারই।