Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/bdopenne/public_html/wp-content/themes/newsflashpro/inc/template-functions.php on line 458
আমি এখন নিঃস্ব, একা: শিক্ষক শঙ্কর দেবনাথ-BD Open News
১০:২৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫

আমি এখন নিঃস্ব, একা: শিক্ষক শঙ্কর দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৩:৪৫:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২
  • / ১৪২৯ বার পড়া হয়েছে

কুমিল্লার মুরাদনগরের একজন স্কুল শিক্ষক শংকর দেবনাথ, যিনি ২০২০ সালে ব্লাসফেমির অভিযোগে নির্যাতিত হয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে ব্লাসফেমির মিথ্যা গুজবে তার বাড়ি এবং স্কুল ভবনে আগুন দেওয়া এবং ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ও আমার পরিবার বেঁচে গেলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীর্ঘদিন কারাভোগ করার পর এখন জামিনে স্বদেশে প্রবাস জীবন যাপন করছি। আমি এখন নিঃস্ব ও স্বাধীন।’

‘শিক্ষা ব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতা: সরকার ও সুশীল সমাজের কার্যক্রম’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারে আরও বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বক্তব্য রাখেন। ১৯৭১ সালের খটক দালাল নির্মূল কমিটি সোমবার বিকেলে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

২০২০ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শঙ্কর দেবনাথ আরও বলেন, ‘সম্প্রতি শ্রেণীকক্ষে সাম্প্রদায়িকতার নৃশংস রূপ দেখে শিক্ষকতা পেশার প্রতি আমার অনুরাগ পরিতৃপ্ত হচ্ছে। আমার মনোবল দিন দিন ভেঙে যাচ্ছে। শংকর দেবনাথ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে মামলা থেকে মুক্তি চেয়ে বলেন, অন্যথায় আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পরিবর্তনের অপেক্ষায় নেই।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত আরেক শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল মনে করেন, এসব ঘটনার পেছনে অর্থ লোভী কিছু নিম্নমানের শিক্ষকের ভূমিকাও রয়েছে। এসব ঘটনা ঠেকাতে দুই থেকে তিন মাস অন্তর অভিভাবকদের সভা ডাকা, বিজ্ঞান শিক্ষকের যোগান বাড়ানো এবং মাঝেমধ্যে প্রশাসনিক মহড়া করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জয়দেব চন্দ্র শীল তার সাথে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, কারাগারে তাকে নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। মামলার খরচ দিতে গিয়ে তার পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি এর দ্রুত সমাধান চান। সুনামগঞ্জের ঝুমন দাসও বর্ণনা করেছেন তার কী হয়েছিল।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনাগুলো জানতাম, পত্রিকায় দেখেছি। কিন্তু এখন নিজের মুখ থেকে শুনলে মনটা ভেঙ্গে যায়। আমি তাদের বলতে চাই, আমরা এবং আপনারা একই দেশের মানুষ। যদি আমরা আর তোমরা সমানভাবে বাঁচতে না পারি, তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার কোনো আনন্দ নেই।’ তিনি বলেন, ‘আসলে এমন দেশ আমরা কখনোই চাইনি।’

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, এটা শুধু লজ্জাজনক ও দুঃখজনক ঘটনাই নয়, দুঃখজনকও। তিনি মনে করেন, এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সবই পরিকল্পিত। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে মন পরিবর্তন করতে হবে। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এ সময় দীপু মনি ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দেন।

একাত্তরের খটক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ওয়েবিনারে তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, গত কয়েক বছরে গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়েছে। হামলার অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে শিক্ষা ব্যবস্থা। যার একটি উদাহরণ হেফাজত ইসলামের দাবির কারণে 2017 সালে স্কুল পাঠ্যক্রমে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এর পরে, হিন্দু ছাত্র ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনা, নির্যাতন এবং গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্লাসফেমির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটন করতে হবে।

নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আসছে তাতে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শহীদ জয়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী।

সম্প্রতি হামলার শিকার অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে সমাজ হাতের বাইরে। এখন রাষ্ট্র হারিয়ে যেতে বসেছে। রাষ্ট্র চাইলেই মৌলবাদ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

মানবাধিকার কর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস, সম্প্রীতি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মামুন আল মাহতাব, ১৯৭০ সালের খটক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আমি এখন নিঃস্ব, একা: শিক্ষক শঙ্কর দেবনাথ

আপডেট সময় ০৩:৪৫:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ জুলাই ২০২২

কুমিল্লার মুরাদনগরের একজন স্কুল শিক্ষক শংকর দেবনাথ, যিনি ২০২০ সালে ব্লাসফেমির অভিযোগে নির্যাতিত হয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে ব্লাসফেমির মিথ্যা গুজবে তার বাড়ি এবং স্কুল ভবনে আগুন দেওয়া এবং ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ও আমার পরিবার বেঁচে গেলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীর্ঘদিন কারাভোগ করার পর এখন জামিনে স্বদেশে প্রবাস জীবন যাপন করছি। আমি এখন নিঃস্ব ও স্বাধীন।’

‘শিক্ষা ব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতা: সরকার ও সুশীল সমাজের কার্যক্রম’ শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারে আরও বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বক্তব্য রাখেন। ১৯৭১ সালের খটক দালাল নির্মূল কমিটি সোমবার বিকেলে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে।

২০২০ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে শঙ্কর দেবনাথ আরও বলেন, ‘সম্প্রতি শ্রেণীকক্ষে সাম্প্রদায়িকতার নৃশংস রূপ দেখে শিক্ষকতা পেশার প্রতি আমার অনুরাগ পরিতৃপ্ত হচ্ছে। আমার মনোবল দিন দিন ভেঙে যাচ্ছে। শংকর দেবনাথ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে মামলা থেকে মুক্তি চেয়ে বলেন, অন্যথায় আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পরিবর্তনের অপেক্ষায় নেই।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত আরেক শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডল মনে করেন, এসব ঘটনার পেছনে অর্থ লোভী কিছু নিম্নমানের শিক্ষকের ভূমিকাও রয়েছে। এসব ঘটনা ঠেকাতে দুই থেকে তিন মাস অন্তর অভিভাবকদের সভা ডাকা, বিজ্ঞান শিক্ষকের যোগান বাড়ানো এবং মাঝেমধ্যে প্রশাসনিক মহড়া করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জয়দেব চন্দ্র শীল তার সাথে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, কারাগারে তাকে নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। মামলার খরচ দিতে গিয়ে তার পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি এর দ্রুত সমাধান চান। সুনামগঞ্জের ঝুমন দাসও বর্ণনা করেছেন তার কী হয়েছিল।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শুনে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনাগুলো জানতাম, পত্রিকায় দেখেছি। কিন্তু এখন নিজের মুখ থেকে শুনলে মনটা ভেঙ্গে যায়। আমি তাদের বলতে চাই, আমরা এবং আপনারা একই দেশের মানুষ। যদি আমরা আর তোমরা সমানভাবে বাঁচতে না পারি, তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার কোনো আনন্দ নেই।’ তিনি বলেন, ‘আসলে এমন দেশ আমরা কখনোই চাইনি।’

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, এটা শুধু লজ্জাজনক ও দুঃখজনক ঘটনাই নয়, দুঃখজনকও। তিনি মনে করেন, এসব ঘটনা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সবই পরিকল্পিত। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে মন পরিবর্তন করতে হবে। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এ সময় দীপু মনি ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে চলমান মামলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দেন।

একাত্তরের খটক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ওয়েবিনারে তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, গত কয়েক বছরে গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিয়েছে। হামলার অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে শিক্ষা ব্যবস্থা। যার একটি উদাহরণ হেফাজত ইসলামের দাবির কারণে 2017 সালে স্কুল পাঠ্যক্রমে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এর পরে, হিন্দু ছাত্র ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনা, নির্যাতন এবং গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্লাসফেমির অভিযোগ এনে তিনি বলেন, শিক্ষাব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটন করতে হবে।

নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আসছে তাতে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শহীদ জয়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী।

সম্প্রতি হামলার শিকার অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে সমাজ হাতের বাইরে। এখন রাষ্ট্র হারিয়ে যেতে বসেছে। রাষ্ট্র চাইলেই মৌলবাদ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

মানবাধিকার কর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস, সম্প্রীতি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মামুন আল মাহতাব, ১৯৭০ সালের খটক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল প্রমুখ বক্তব্য দেন।