২৩ দিন পর নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বন্ধ, আতঙ্ক কাটেনি স্থানীয়দের
- আপডেট সময় ০২:০৫:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ১২২১ বার পড়া হয়েছে
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মায়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে স্বাধীনতার পক্ষের আরাকান আর্মি (এএ) টানা ২৩ দিন ধরে যুদ্ধ করছে। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর হেলিকপ্টার ও ফাইটার জেট থেকে ছোড়া বুলেট ও বেশ কিছু মর্টার শেল সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়ে। ফলে আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সীমান্তের ওপার থেকে কোনো গুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। আকাশে জঙ্গি বিমানের উড্ডয়ন দেখা যায়নি।
গতকাল বাংলাদেশের ভূখণ্ডে গোলাবর্ষণের পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে রোববার তলব করা হবে। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করা হবে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিও মো আজ বিকেলে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পৌঁছান। গতকালের ঘটনার জন্য রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মইনুল কবির।
হঠাৎ করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তৎপরতা সীমিত হওয়ার পেছনে একাধিক কারণের কথা বলছেন সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এর মধ্যে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবাদ, মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড ফোর্সের (বিজিপি) আটক সদস্যদের উদ্ধারে অগ্রগতি এবং যুদ্ধক্ষেত্রে পরিবর্তন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, হঠাৎ গুলি বন্ধের ঘটনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলেও মিয়ানমারের উদ্দেশ্য বোঝা কঠিন।
নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা বলছেন, গত ২৩ দিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা করেও মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী আরাকান আর্মিকে দমন করতে পারছে না। কিন্তু আচমকা গুলিবর্ষণ বন্ধ হওয়া সন্দেহের জন্ম দেয়। স্থানীয় লোকজন এখনও পরিস্থিতি বুঝতে পারছে না। হতাহতের আশঙ্কায় কাউকে সীমান্তের দিকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ৪০ ও ৪১ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছে বাংলাদেশি রাবার বাগানে কর্মরত দুই হাজারেরও বেশি শ্রমিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
আতঙ্কে জিরো লাইনে ৪ হাজার রোহিঙ্গা
ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজারের কোণ এবং মায়ানমারের ‘খা মং সেক’ পাহাড়ের মধ্যবর্তী এলাকা হলো ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’। রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত 621টি পরিবারের 4,200 এরও বেশি রোহিঙ্গা পাঁচ বছর ধরে এখানে (শূন্য রেখা) বসবাস করছে। স্থলযুদ্ধ ছাড়াও আকাশ থেকে ছোড়া গুলি, মর্টার শেল ও বোমাকে ভয় পায় তারা।
জিরো লাইন আশ্রয় শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ (৫০) BD OPEN NEWS
কে বলেন, প্রতিদিন সকালে উভয় দিক থেকে গোলাগুলি হচ্ছে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার থেকে আকাশে গুলি, মর্টার শেল ও বোমা ছোড়া হচ্ছে। তবে রোববার সকাল থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত গুলির শব্দ শোনা যায়নি। আকাশে ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টারও দেখা যায়নি। হঠাৎ করে মিয়ানমারের শান্ত থাকার লক্ষণ ভালো দেখা যাচ্ছে না। হয়তো তারা তাদের শক্তি বাড়িয়ে আর্কেন আর্মিকে দমন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অথবা অন্য কোনো যুদ্ধে অংশ নিতে ওপার থেকে সৈন্যদের সেখানে পাঠানো হতে পারে
দিল মোহাম্মদ ১০ বছর ধরে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্য ছিলেন। তার বাড়ি রাখাইন রাজ্যের মেদি পাড়ায়। তিনি বলেন, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেড ক্রস (আইসিআরসি) টানা ১৫ দিন আশ্রয় শিবিরে থাকা ৪ হাজার ২০০ রোহিঙ্গাকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। ত্রাণ বিতরণের তারিখ আগামীকাল মঙ্গলবার। গোলাবর্ষণ আবার শুরু হলে ত্রাণ তৎপরতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।