সংসদ সদস্য হবেন পঙ্কজ নাথ?
- আপডেট সময় ০৪:২০:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ১১৫২ বার পড়া হয়েছে
বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথকে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী, কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেওয়ার পর দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার বা পুনর্বহাল করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, শেষ পর্যন্ত দল থেকে সরে গেলে সংসদ সদস্য হিসেবে পঙ্কজ নাথের অবস্থানের কী হবে? তিনি সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকবেন নাকি বাদ পড়বেন?
এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেওয়া কঠিন। কারণ এর পেছনে দুই ধরনের পদ্ধতিগত সমস্যা রয়েছে, আইনি সমস্যা এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য হবেন কি না, তা নির্ধারণের জন্য তার দল, জাতীয় পরিষদের স্পিকার এবং নির্বাচন কমিশনের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। আইনী প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্য হিসেবে তার পদ কেড়ে নেওয়া বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। অতীতে এমন প্রথা কম ছিল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামী লীগ কি পঙ্কজ নাথের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের চেষ্টা করবে? এ ক্ষেত্রে দলের পক্ষ থেকে স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো উচিত।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে পঙ্কজ নাথকে দল থেকে বরখাস্ত করা হলেও সংসদ সদস্য পদ থেকে তার পদ কেড়ে নেওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাকে দলীয় মনোনয়ন পেতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
পঙ্কজ নাথ বরিশাল আওয়ামী লীগের ২৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের একজন। এই উপদেষ্টা পরিষদ কার্যনির্বাহী সংসদের অংশ নয়। অর্থাৎ তিনি কোন পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যদিও এটি একটি সমস্যা হওয়া উচিত নয়। বরং তাকে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা হবে সাংগঠনিকভাবে গুরুতর বিষয়। এমনটি হলে এখনই না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন না বলে ধারণা করা যায়।
১১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত মুক্তি পত্রে বলা হয়, পঙ্কজ নাথকে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাসহ দলীয় অন্যান্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, সাধারণত শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তবে পঙ্কজ নাথকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। যা খুবই নমনীয় পদক্ষেপ। ফলে কারণ দর্শানোর পর তার পদ ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে। তা না হলে তার প্রাথমিক সদস্যপদ অক্ষুণ্ণ থাকবে। এ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য হিসেবে তার অবস্থান নিয়ে কোনো সংশয় থাকবে না।
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে কোনো নেতাকে সংশ্লিষ্ট জেলা পর্যায় থেকে বহিষ্কার বা অব্যাহতির সুপারিশ করা হলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে সময় নেওয়া হয়। কিন্তু পঙ্কজ নাথের ক্ষেত্রে তা হয়নি। খুব দ্রুত গতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অতীতে সারাদেশে বহিষ্কৃত নেতাদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ চিন্তা চলছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের প্রভাবশালী মহল অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে একজন সংসদ সদস্যকে মুক্তি দিতে ত্বরান্বিত গতিতে তদবির করেছে।
সংসদ সদস্যের পদ থাকা বা না থাকা
পঙ্কজ নাথ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদীয় নির্বাচন আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে দলীয় বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। কোনো দল থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর ওই দল থেকে পদত্যাগ করলে সংবিধান অনুযায়ী তিনি সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। এটি পঙ্কজ নাথের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ, তিনি পদত্যাগ করেননি।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত কোনো ব্যক্তি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে। কিন্তু দল কাউকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দিলে কী হবে, সংবিধানে তা উল্লেখ নেই।
যাইহোক, সংবিধানের 66 অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “কোন সংসদ সদস্যের আসন খালি হবে কি হবে না তা নিয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে, প্রশ্নটি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হবে এবং সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কমিশন চূড়ান্ত হবে।”
এ ছাড়া, যদি কোনো ব্যক্তিকে কোনো আদালত কর্তৃক স্বাভাবিক ও দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়, কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করা হয়, কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন এবং কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, কোনো আন্তর্জাতিক ফৌজদারি ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হন,