মানুষ খালে পড়ে ডুবে যায়, তাই ভয়ে চলাফেরা করে
- আপডেট সময় ০৬:৫৭:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
- / ৭৫৮ বার পড়া হয়েছে
গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রামে খোলা খালে শিশুসহ অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে মুরাদপুরে সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ পিছলে চশমা খালে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ব্যাপক আলোচিত হয়। সালেহ আহমেদকে এখনো পাওয়া যায়নি।
সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে নগরীর খোলা ড্রেনে মৃত্যুর জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। নগরীর বিভিন্ন এলাকার খাল-নালার বিভিন্ন অংশ এখনো খোলা রয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পশ্চিম বাকলিয়ার রূপনগর এলাকায় কথা হয় সাফোয়ান আস সফরের সঙ্গে। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার বাড়ির পাশেই ড্রেন। ড্রেনের পাশে রাস্তা। বৃষ্টি হলে হাঁটু পানি জমে যায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হাজার হাজার মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেন। শিক্ষার্থীরা সকালে স্কুলে যায়। অনেক সময় পথচারীরা ড্রেনে পড়ে আহত হন। অন্যদিকে পাইকাররা চাক্তাই খাল দিয়ে পণ্য আনেন ও নিয়ে যান। খল্লাগোয়া সরু সড়কে রিকশা, মিনি ট্রাক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচল করে। তবে খালের বড় অংশ এখনো অরক্ষিত। খাল ও রাস্তার মধ্যে কোনো বিভাজন রেখা নেই। বর্ষায় খাল ফুলে ফুলে ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তখন ঝুঁকি বেড়ে যায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্ষায় চাক্তাই খালে পানির উচ্চতা বাড়ে। খালের পাশে নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী। এতে ঝুঁকি নিতে হয় পথচারীদের।
গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে নগরীর একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তাই খোলা খাল-নালা নিয়ে নগরবাসীর আতঙ্ক বেড়েছে। খালে পড়ে হতাহতের ঘটনা তাদের মধ্যে এই আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে।
গত বছরের ৩০ জুন নগরীর মেয়র গলি এলাকায় একটি খালে গ্লাস পড়ে অটোরিকশা চালক ও এক যাত্রী নিহত হন। গত ২৫ আগস্ট নগরীর মুরাদপুরে ছালেহ আহমেদ নামে এক সবজি বিক্রেতা পিছলে চশমা খালে পড়ে যান। গত ৬ ডিসেম্বর চশমা খালে ডুবে ষোল শিশুর মৃত্যু হয়। কামাল উদ্দিন। তিন দিন পর শহরের মির্জা খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে খালের কোনো অংশে এখনো নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া হয়নি।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর নগরীর আগ্রাবাদ মাজার গেট এলাকায় ফুটপাতে পিছলে পড়ে শেহেরিন মাহমুদ সাদিয়া নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এরপর ওই ড্রেনে স্ল্যাব বসানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এ ঘটনার কোনো দায় নেয়নি। এসব মৃত্যুর জন্য দুই সংগঠন একে অপরকে দায়ী করে আসছে। সংগঠন দুটির ভূমিকা নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। একটি সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর জন্য দুটি সংস্থার অবহেলাকে দায়ী করা হয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, পথচারীদের নিরাপদে যাতায়াতের জন্য গত দুই বছরে প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট স্ল্যাব মেরামত ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ খালের পাড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১৫ হাজার বর্গফুট প্রতিরক্ষা দেয়াল। তবে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে এখনও অন্তত ৩ হাজার মৃত্যুফাঁদ রয়েছে। আর পথচারীদের চলাচল নিরাপদ করতে খালের পাড়ে ১৯ হাজার ২৩৪ মিটার নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রয়োজন। তালিকা তৈরি করা হলেও ড্রেন ও খাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ করতে পারেনি সিটি করপোরেশন।
তবে খালগুলো ঝুঁকিমুক্ত করতে স্ল্যাব বসানোর কাজ করছে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ধারাবাহিকভাবে স্ল্যাব মেরামত ও নির্মাণকাজ চলছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে খাল ঘেরানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সাবেক জাতীয় বোর্ড সদস্য ও প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার খালগুলো ঝুঁকিমুক্ত না করার জন্য সিডিএ-সিটি করপোরেশনের অবহেলার জন্য প্রথম আলোকে দায়ী করেছেন। একজনের মৃত্যুর পর দু-একদিন কথা হয় না। তারপর সবকিছু আগের মতই চলতে থাকে। এসব ঘটনায় কাউকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। দুই সংস্থা এর দায় এড়াতে পারে না।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর নগরীর আগ্রাবাদ মাজার গেট এলাকায় ফুটপাতে পিছলে পড়ে শেহেরিন মাহমুদ সাদিয়া নামে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এরপর ওই ড্রেনে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এ ঘটনার কোনো দায় নেয়নি। এসব মৃত্যুর জন্য দুই সংগঠন একে অপরকে দায়ী করে আসছে। সংগঠন দুটির ভূমিকা নিয়ে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। একটি সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর জন্য দুটি সংস্থার অবহেলাকে দায়ী করা