ভেসে চলে গেছে সম্পদ , অনেকে কোরবানি দিতে পারছে না

- আপডেট সময় ০৪:৪৭:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ জুলাই ২০২২
- / ১০২৬ বার পড়া হয়েছে
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কাঁঠালবাড়ি গ্রামের হাবিবুর রহমান (৬৩) একজন কৃষক। এ বছর তিনি প্রায় চার একর জমিতে ধান চাষ করেছেন। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে প্রথম দফায় বোরো ধান এবং শেষ পর্যায়ে আমন ধান তলিয়ে গেছে। এছাড়া বন্যার পানিতে হাবিবুরের বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন দফা বন্যায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া হাবিবুর এবারও পশু কোরবানি দিতে পারছেন না। সে এখন কষ্ট পাচ্ছে। ঈদে পরিবারে নেই।
বন্যা কবলিত সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার অনেকেরই একই অবস্থা হাবিবুর। তাই পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে এলেও অনেক বাড়িতেই নেই উৎসবের আমেজ। বেশ কিছু বানভাসি, যারা ভয়াবহ বন্যায় তাদের জীবন-জীবিকা হারিয়েছে বলেছে, তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং তাদের ফসল তলিয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে, দোকানপাট তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় মানুষ এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে লড়াই করছে। অর্থের অভাবে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ পশু কোরবানি দিতে পারছে না। বিগত বছর যারা একাধিক পশু কোরবানি করেছেন তারাও এবার কম কোরবানি দেবেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিমুলতলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম জানান, গ্রামে ১৪০টি পরিবার বসবাস করে। বন্যার পানি ছিল কোমর থেকে ঘাড় পর্যন্ত। অধিকাংশ ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। সকলের আসবাবপত্র, জামাকাপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভেসে গেছে। গ্রামের কেউ কোরবানি দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।
এ বছর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় তিন দফায় এবং জেলার বাকি ১০টি উপজেলায় দুই দফায় বন্যা হয়েছে। সরকারি হিসাবে, জেলায় ৪০,০৪১টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অন্তত ৩০ লাখ। ১৫ জুন শুরু হওয়া বন্যায় অন্তত ৪০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সিলেট সদর উপজেলার জাঙ্গাইল গ্রামের ব্যবসায়ী হায়দার রুবেল (৪০) জানান, তিনি গত বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় গরু কোরবানি দিয়েছিলেন। এ বছর দুই দফা বন্যা তাকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। আর্থিকভাবে তার অবস্থা খুবই খারাপ। তার মতো গ্রামের অনেকেরই একই অবস্থা।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বিডি ওপেন নিউজকে বলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ উপজেলার অনেকেই ত্যাগ স্বীকারের ক্ষমতা হারিয়েছেন। তবে বিভিন্ন স্থানের বিত্তবান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এবং স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ঈদের দিন বন্যা কবলিত দরিদ্র এলাকায় পশু কোরবানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।