০৯:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

জমি ও ফ্ল্যাটে কালো টাকা তৈরির পথ বন্ধে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের দুটি পরামর্শ

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৩:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২
  • / ১০৫০ বার পড়া হয়েছে

bdopennews

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জমি-সমতল বাণিজ্যের মাধ্যমে কালো টাকা সৃষ্টি বন্ধের দুটি উপায় তুলে ধরেছেন। তার প্রথম পরামর্শ হল জরিপ করা এলাকার উপর নির্ভর করে প্রতি বর্গফুট জমি ও ফ্ল্যাটের প্রকৃত বাজার মূল্যের ভিত্তিতে প্রতি কয়েকদিন পর রেজিস্ট্রেশনের বাস্তবসম্মত সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা। দ্বিতীয় পরামর্শ হচ্ছে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর দাবি মেনে জমি বা ফ্ল্যাটের বিক্রয়মূল্যের অনুপাতে রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মনে করেন, এমন কোনো আইন থাকা উচিত নয়, যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কালো টাকা তৈরি হয়। এছাড়া সৎ করদাতারা কালো টাকার মালিক হতে বাধ্য হচ্ছেন।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রোববার তার ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানান। সেখানেই তিনি পরামর্শ দেন। বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রি করে কালো টাকা তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন।

অর্থমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, ঢাকা শহরে যাদের জমি বা ফ্ল্যাট আছে তারা সবাই এক অর্থে ‘কালো টাকার মালিক’। যে ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে দুই কোটি টাকায়, সেই ফ্ল্যাটের আসল দাম ১০ কোটি টাকা। ফলে সরকার বাড়তি রেজিস্ট্রেশন ফি পাচ্ছে না। এখানেই তৈরি হচ্ছে কালো টাকা। এই বিষয়গুলো সবাইকে বুঝতে হবে। ঢাকা শহরে যে জমির মালিক বা জমি কিনেছেন তিনিই বলতে পারবেন, কত টাকা রেজিস্ট্রি করা হয়েছে এবং জমির প্রকৃত বাজারদর কত? এ অবস্থার জন্য সরকার ও বিদ্যমান ‘সিস্টেম’কে দায়ী করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আজ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

স্ট্যাটাসে লিখেছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, মাননীয় অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে ঢাকা শহরে যাদের জমি বা ফ্ল্যাট আছে তারা সবাই কালো টাকার মালিক। কালো টাকা বলতে আয়কর রিটার্নে ‘অপ্রকাশিত’ আয় বোঝায়। বিশেষ করে গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকার উদাহরণ দিয়েছেন তিনি। আশ্চর্যের বিষয়, এত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের কোনো আলোচনাই হয়নি। রিহ্যাব বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলির একটি সমিতি ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য নিবন্ধন ফি কমানোর দাবি করেছে, তবে মন্তব্য করেনি।

দেশে ব্যাপক কর ফাঁকির প্রবণতা রয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয় করেন

বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি উল্লেখ করে তিনি এ মন্তব্য করেন। সরকার বিভিন্ন অঞ্চলে জমি বা ফ্ল্যাট হস্তান্তরের জন্য মূল্য নির্ধারণ করেছে (জমি বা ফ্ল্যাটের আকার অনুযায়ী)। অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, গুলশান এলাকায় প্রকৃত দাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে পাঁচ-ছয় গুণ বেশি। অতএব, যে ব্যক্তি সেই মূল্যে বিক্রি করছেন তিনি আয়কর কর্তৃপক্ষকে বিক্রয় থেকে আয়ের বৈধ উত্স দেখাতে পারবেন না এবং অপ্রকাশিত থাকবে। অর্থমন্ত্রীর মতে, আইনের অসঙ্গতি থেকেই কালো টাকা তৈরি হচ্ছে।

তবে অর্থমন্ত্রী হয়তো অসাবধানতাবশত সবাইকে ভুল তথ্য দিয়ে দোষারোপ করেছেন। নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত মূল্য সর্বোচ্চ নয়, সর্বনিম্ন। যাতে অন্তত এই মূল্যে উৎসে আয়করসহ যাবতীয় নিবন্ধন ফি আদায় করা হয়। কিন্তু প্রকৃত দামের চেয়ে বহুগুণ বেশি রেজিস্ট্রেশন করতে কোনো বাধা নেই। সেই অভিজাত এলাকায়, প্রকৃত মূল্যে বিক্রয় নিবন্ধন করার নজির রয়েছে এবং আয়কর রিটার্নে বিক্রয় থেকে সম্পূর্ণ আয় দেখানোর নজির রয়েছে। আর অনেক লোক যারা এসব এলাকায় সরকারের কাছ থেকে জমি বরাদ্দ পেয়ে হাউজিং কোম্পানির মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্ট বা বিল্ডিং ভাড়া নিচ্ছেন, তারা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি না করলে তাদের কালো টাকার মালিক হওয়ার কথা নয়।

তবে সমস্যা চিহ্নিত করেছেন অর্থমন্ত্রী। একজন বৈধ করদাতা প্রকৃত মূল্য দেখিয়ে ফ্ল্যাটের বিক্রয় নিবন্ধন করতে চাইলেও সেই মূল্য দেখিয়ে ক্রয় করতে আগ্রহী এমন ক্রেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। একটি উচ্চ নিবন্ধন ফি আছে, কিন্তু মূল্য পরিশোধ করার জন্য একটি বৈধ বা ‘প্রদর্শিত’ আয় আছে—ক্রেতা প্রায়ই খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থমন্ত্রীরও তা সঠিক অনুমান

নিউজটি শেয়ার করুন

জমি ও ফ্ল্যাটে কালো টাকা তৈরির পথ বন্ধে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের দুটি পরামর্শ

আপডেট সময় ০৩:৩৫:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জমি-সমতল বাণিজ্যের মাধ্যমে কালো টাকা সৃষ্টি বন্ধের দুটি উপায় তুলে ধরেছেন। তার প্রথম পরামর্শ হল জরিপ করা এলাকার উপর নির্ভর করে প্রতি বর্গফুট জমি ও ফ্ল্যাটের প্রকৃত বাজার মূল্যের ভিত্তিতে প্রতি কয়েকদিন পর রেজিস্ট্রেশনের বাস্তবসম্মত সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা। দ্বিতীয় পরামর্শ হচ্ছে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর দাবি মেনে জমি বা ফ্ল্যাটের বিক্রয়মূল্যের অনুপাতে রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ মনে করেন, এমন কোনো আইন থাকা উচিত নয়, যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কালো টাকা তৈরি হয়। এছাড়া সৎ করদাতারা কালো টাকার মালিক হতে বাধ্য হচ্ছেন।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ রোববার তার ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানান। সেখানেই তিনি পরামর্শ দেন। বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জমি ও ফ্ল্যাট বিক্রি করে কালো টাকা তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন।

অর্থমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, ঢাকা শহরে যাদের জমি বা ফ্ল্যাট আছে তারা সবাই এক অর্থে ‘কালো টাকার মালিক’। যে ফ্ল্যাটের রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে দুই কোটি টাকায়, সেই ফ্ল্যাটের আসল দাম ১০ কোটি টাকা। ফলে সরকার বাড়তি রেজিস্ট্রেশন ফি পাচ্ছে না। এখানেই তৈরি হচ্ছে কালো টাকা। এই বিষয়গুলো সবাইকে বুঝতে হবে। ঢাকা শহরে যে জমির মালিক বা জমি কিনেছেন তিনিই বলতে পারবেন, কত টাকা রেজিস্ট্রি করা হয়েছে এবং জমির প্রকৃত বাজারদর কত? এ অবস্থার জন্য সরকার ও বিদ্যমান ‘সিস্টেম’কে দায়ী করেন তিনি।

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আজ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন।

স্ট্যাটাসে লিখেছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, মাননীয় অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন যে ঢাকা শহরে যাদের জমি বা ফ্ল্যাট আছে তারা সবাই কালো টাকার মালিক। কালো টাকা বলতে আয়কর রিটার্নে ‘অপ্রকাশিত’ আয় বোঝায়। বিশেষ করে গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকার উদাহরণ দিয়েছেন তিনি। আশ্চর্যের বিষয়, এত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের কোনো আলোচনাই হয়নি। রিহ্যাব বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলির একটি সমিতি ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য নিবন্ধন ফি কমানোর দাবি করেছে, তবে মন্তব্য করেনি।

দেশে ব্যাপক কর ফাঁকির প্রবণতা রয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয় করেন

বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি উল্লেখ করে তিনি এ মন্তব্য করেন। সরকার বিভিন্ন অঞ্চলে জমি বা ফ্ল্যাট হস্তান্তরের জন্য মূল্য নির্ধারণ করেছে (জমি বা ফ্ল্যাটের আকার অনুযায়ী)। অর্থমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, গুলশান এলাকায় প্রকৃত দাম নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে পাঁচ-ছয় গুণ বেশি। অতএব, যে ব্যক্তি সেই মূল্যে বিক্রি করছেন তিনি আয়কর কর্তৃপক্ষকে বিক্রয় থেকে আয়ের বৈধ উত্স দেখাতে পারবেন না এবং অপ্রকাশিত থাকবে। অর্থমন্ত্রীর মতে, আইনের অসঙ্গতি থেকেই কালো টাকা তৈরি হচ্ছে।

তবে অর্থমন্ত্রী হয়তো অসাবধানতাবশত সবাইকে ভুল তথ্য দিয়ে দোষারোপ করেছেন। নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত মূল্য সর্বোচ্চ নয়, সর্বনিম্ন। যাতে অন্তত এই মূল্যে উৎসে আয়করসহ যাবতীয় নিবন্ধন ফি আদায় করা হয়। কিন্তু প্রকৃত দামের চেয়ে বহুগুণ বেশি রেজিস্ট্রেশন করতে কোনো বাধা নেই। সেই অভিজাত এলাকায়, প্রকৃত মূল্যে বিক্রয় নিবন্ধন করার নজির রয়েছে এবং আয়কর রিটার্নে বিক্রয় থেকে সম্পূর্ণ আয় দেখানোর নজির রয়েছে। আর অনেক লোক যারা এসব এলাকায় সরকারের কাছ থেকে জমি বরাদ্দ পেয়ে হাউজিং কোম্পানির মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্ট বা বিল্ডিং ভাড়া নিচ্ছেন, তারা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি না করলে তাদের কালো টাকার মালিক হওয়ার কথা নয়।

তবে সমস্যা চিহ্নিত করেছেন অর্থমন্ত্রী। একজন বৈধ করদাতা প্রকৃত মূল্য দেখিয়ে ফ্ল্যাটের বিক্রয় নিবন্ধন করতে চাইলেও সেই মূল্য দেখিয়ে ক্রয় করতে আগ্রহী এমন ক্রেতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। একটি উচ্চ নিবন্ধন ফি আছে, কিন্তু মূল্য পরিশোধ করার জন্য একটি বৈধ বা ‘প্রদর্শিত’ আয় আছে—ক্রেতা প্রায়ই খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থমন্ত্রীরও তা সঠিক অনুমান