০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩

চলন্ত বাসে ডাকাতি সময় যা ঘটেছিল

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ অগাস্ট ২০২২
  • / ১০২৮ বার পড়া হয়েছে

চলন্ত বাসে ডাকাতি সময় যা ঘটেছিল

কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ঈগল পরিবহনের চলন্ত বাস নিয়ন্ত্রণ করে ছিনতাইয়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এক যাত্রী। তার নাম হেকমত আলী। তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সলিমপুর এলাকার একজন ফল ব্যবসায়ী। গত মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী, দুই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে ওই বাসে ঢাকায় যান তিনি।

হেকমত আলী জানান, তার স্ত্রী জেসমিন আরা, তাদের চার বছরের ছেলে ও দুই বছরের মেয়ে, শাশুড়ি শিল্পী খাতুনকে নিয়ে তিনি গত মঙ্গলবার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া এলাকা থেকে ঈগল পরিবহনের বাসে ওঠেন। রাত সাড়ে ৮টা। এর আগে রাত ৮টার দিকে বাসটি একই উপজেলার প্রাগপুর থেকে ছেড়ে যায়। এ সময় বাসে ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রী ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঈগল পরিবহনের বাসটি ভেড়ামারা লালন শাহ সেতু, বনপাড়া হয়ে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলের সামনে এসে থামে। সেখানে কিছুক্ষণ বিরতির পর বেলা সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার দিকে চলতে থাকে।

হেকমত আলী জানান, রাত ১২টার দিকে মহাসড়কের একটি স্থানে চার যুবক বাসের সামনে হাত তোলেন। বাস চালকের সহকারী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলেন। এক-দুই মিনিটের মধ্যে যুবকরা বাসে উঠে সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে বাসের পিছনে বসে। এই চার যুবকের প্রত্যেকের মুখে মাস্ক ছিল। তাদের একজনের পিঠে একটি ব্যাগ ছিল। বসে থাকার পরপরই তারা মোবাইল ফোন ট্যাপ করতে থাকে। বাস আরও১৫ মিনিট চলে। এরপর সড়ক থেকে একইভাবে বাসে ওঠেন আরও পাঁচজন। তারাও কিছু আসনে বসলেন। কয়েক মিনিট পর আরেকটু সামনে আরো দুজন উঠে পড়ল। এর পরপরই বাসচালককে বাস থামাতে বলা হয়। বাসচালক থামতে অস্বীকার করলে তাকে মারধর করে একদল যুবক। এক যুবক দ্রুত তাকে সরিয়ে চালকের আসনে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

হেকমত আলী বলতে থাকেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসের প্রতিটি সিটের পাশে দশজন করে যুবক দাঁড়িয়ে পড়ে। তারা পুরুষ যাত্রীদের গলায় ছুরি ও কাঁচি ধরে। তিন-চারজন দ্রুত বাসের পর্দা কেটে পুরুষ যাত্রীদের মুখ, হাত-পা বেঁধে ফেলে। মাথা নিচু করে বাসের মাঝখানে বসিয়ে দিলেন। বাসে থাকা ১০ থেকে১২ জন মহিলা যাত্রীর মধ্যে একজনের চোখ বেঁধে, মুখ বাঁধা এবং হাত বাঁধা ছিল। বাকিদের চোখ, মুখ ও হাত খোলা ছিল। ওই এক নারী যাত্রী তার শাশুড়ি। বাস তখন স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে। বাসের সব বাতি নিভে গেছে। জানালাগুলো অবরুদ্ধ। ডাকাতরা সবার কাছে গিয়ে মহিলা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। হেকমত আলী জানান, তিনি বাসের পেছনের সামনে তিনটি আসনে বসেছিলেন। তার হাত বাঁধা। তার থেকে দুই হাত দূরে একজন মহিলাকে তল্লাশি করার সময়, মহিলাটি প্রতিবাদ করেন। মহিলা ডাকাতদের বললেন, ‘তোমরা যা করছ তা ঠিক না। আমার এলাকা পাবনায় হলে তোমায় দেখতাম।’ এ কথা শোনার পর ওই দুই যুবক ওই নারীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে।

হেকমত আলীর স্ত্রী জেসমিন আরা জানান, তিনি তার এক সন্তানকে সিটে ধরে মাথা নিচু করে সৃষ্টিকর্তার নাম ডাকছিলেন। তার মা সামনের সিটে আরেক সন্তানের সাথে বসে ছিলেন। তার হাত, চোখ ও মুখ বাঁধা ছিল। তাদের এক সন্তান কাঁদলে এক যুবক এসে বললো, কাঁদো না, আমাদের মতো ডাকাত হয়ো না!

হেকমত আলী ও তার স্ত্রী জেসমিন আরও জানান, ডাকাত দল সবকিছু শেষ করে একে অপরকে ডাকে। তারা ডাকাত দলের নেতাকে চাচা বলে সম্বোধন করছিলেন। কখনো তাকে নুরু, সাব্বির, রকি নামে ডাকা হতো। ভোর ৩টার দিকে ডাকাতরা নিজেদের মধ্যে টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার ভাগাভাগি করতে থাকে। বাসের ভেতরে ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে দ্রুত নেমে পড়েন। বাসের ভেতরে কোনো যাত্রী মাথা তুলে কথা বলার চেষ্টা করলে তাদের বেধড়ক মারধর করা হয়।

হেকমত আলী বলেন, ভোরে পুলিশ এলে কয়েকজন যাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ থানায় তাদের দুটি ছবি দেখায়। যাত্রীরা নিশ্চিত করেছেন যে ছবির দুই ব্যক্তি বাসে ছিলেন। এরপর বুধবার সারাদিন তারা মধুপুর থানায় ছিলেন। রাত নয়টার দিকে পুলিশ বিআরটিসির গাড়িতে টিকিট কেটে কুষ্টিয়ায় পাঠায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চলন্ত বাসে ডাকাতি সময় যা ঘটেছিল

আপডেট সময় ০৭:০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ অগাস্ট ২০২২

কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ঈগল পরিবহনের চলন্ত বাস নিয়ন্ত্রণ করে ছিনতাইয়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন এক যাত্রী। তার নাম হেকমত আলী। তিনি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সলিমপুর এলাকার একজন ফল ব্যবসায়ী। গত মঙ্গলবার রাতে স্ত্রী, দুই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে ওই বাসে ঢাকায় যান তিনি।

হেকমত আলী জানান, তার স্ত্রী জেসমিন আরা, তাদের চার বছরের ছেলে ও দুই বছরের মেয়ে, শাশুড়ি শিল্পী খাতুনকে নিয়ে তিনি গত মঙ্গলবার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া এলাকা থেকে ঈগল পরিবহনের বাসে ওঠেন। রাত সাড়ে ৮টা। এর আগে রাত ৮টার দিকে বাসটি একই উপজেলার প্রাগপুর থেকে ছেড়ে যায়। এ সময় বাসে ১০ থেকে ১৫ জন যাত্রী ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঈগল পরিবহনের বাসটি ভেড়ামারা লালন শাহ সেতু, বনপাড়া হয়ে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলের সামনে এসে থামে। সেখানে কিছুক্ষণ বিরতির পর বেলা সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার দিকে চলতে থাকে।

হেকমত আলী জানান, রাত ১২টার দিকে মহাসড়কের একটি স্থানে চার যুবক বাসের সামনে হাত তোলেন। বাস চালকের সহকারী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলেন। এক-দুই মিনিটের মধ্যে যুবকরা বাসে উঠে সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে বাসের পিছনে বসে। এই চার যুবকের প্রত্যেকের মুখে মাস্ক ছিল। তাদের একজনের পিঠে একটি ব্যাগ ছিল। বসে থাকার পরপরই তারা মোবাইল ফোন ট্যাপ করতে থাকে। বাস আরও১৫ মিনিট চলে। এরপর সড়ক থেকে একইভাবে বাসে ওঠেন আরও পাঁচজন। তারাও কিছু আসনে বসলেন। কয়েক মিনিট পর আরেকটু সামনে আরো দুজন উঠে পড়ল। এর পরপরই বাসচালককে বাস থামাতে বলা হয়। বাসচালক থামতে অস্বীকার করলে তাকে মারধর করে একদল যুবক। এক যুবক দ্রুত তাকে সরিয়ে চালকের আসনে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

হেকমত আলী বলতে থাকেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসের প্রতিটি সিটের পাশে দশজন করে যুবক দাঁড়িয়ে পড়ে। তারা পুরুষ যাত্রীদের গলায় ছুরি ও কাঁচি ধরে। তিন-চারজন দ্রুত বাসের পর্দা কেটে পুরুষ যাত্রীদের মুখ, হাত-পা বেঁধে ফেলে। মাথা নিচু করে বাসের মাঝখানে বসিয়ে দিলেন। বাসে থাকা ১০ থেকে১২ জন মহিলা যাত্রীর মধ্যে একজনের চোখ বেঁধে, মুখ বাঁধা এবং হাত বাঁধা ছিল। বাকিদের চোখ, মুখ ও হাত খোলা ছিল। ওই এক নারী যাত্রী তার শাশুড়ি। বাস তখন স্বাভাবিক গতিতে চলতে থাকে। বাসের সব বাতি নিভে গেছে। জানালাগুলো অবরুদ্ধ। ডাকাতরা সবার কাছে গিয়ে মহিলা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। হেকমত আলী জানান, তিনি বাসের পেছনের সামনে তিনটি আসনে বসেছিলেন। তার হাত বাঁধা। তার থেকে দুই হাত দূরে একজন মহিলাকে তল্লাশি করার সময়, মহিলাটি প্রতিবাদ করেন। মহিলা ডাকাতদের বললেন, ‘তোমরা যা করছ তা ঠিক না। আমার এলাকা পাবনায় হলে তোমায় দেখতাম।’ এ কথা শোনার পর ওই দুই যুবক ওই নারীকে মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে।

হেকমত আলীর স্ত্রী জেসমিন আরা জানান, তিনি তার এক সন্তানকে সিটে ধরে মাথা নিচু করে সৃষ্টিকর্তার নাম ডাকছিলেন। তার মা সামনের সিটে আরেক সন্তানের সাথে বসে ছিলেন। তার হাত, চোখ ও মুখ বাঁধা ছিল। তাদের এক সন্তান কাঁদলে এক যুবক এসে বললো, কাঁদো না, আমাদের মতো ডাকাত হয়ো না!

হেকমত আলী ও তার স্ত্রী জেসমিন আরও জানান, ডাকাত দল সবকিছু শেষ করে একে অপরকে ডাকে। তারা ডাকাত দলের নেতাকে চাচা বলে সম্বোধন করছিলেন। কখনো তাকে নুরু, সাব্বির, রকি নামে ডাকা হতো। ভোর ৩টার দিকে ডাকাতরা নিজেদের মধ্যে টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার ভাগাভাগি করতে থাকে। বাসের ভেতরে ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে দ্রুত নেমে পড়েন। বাসের ভেতরে কোনো যাত্রী মাথা তুলে কথা বলার চেষ্টা করলে তাদের বেধড়ক মারধর করা হয়।

হেকমত আলী বলেন, ভোরে পুলিশ এলে কয়েকজন যাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ থানায় তাদের দুটি ছবি দেখায়। যাত্রীরা নিশ্চিত করেছেন যে ছবির দুই ব্যক্তি বাসে ছিলেন। এরপর বুধবার সারাদিন তারা মধুপুর থানায় ছিলেন। রাত নয়টার দিকে পুলিশ বিআরটিসির গাড়িতে টিকিট কেটে কুষ্টিয়ায় পাঠায়।