খুনিদের অস্ত্র ব্যবহার ও পালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল: র্যাব
- আপডেট সময় ০৪:১৫:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / ৭৭৬ বার পড়া হয়েছে
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে ২০১৬ সালে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আবদুল কাদের খানের পরিকল্পনায় হত্যা করা হয়। প্রথম ব্যর্থতার দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে মঞ্জুরুলকে হত্যা করতে সফল হয় দুর্বৃত্তরা। খুনিদের অস্ত্র পরিচালনা এবং হত্যার পর দ্রুত পালানোর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল।
আজ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শাহীন, রানা ও মেহেদী মিলে মঞ্জুরুলকে তার বাড়িতে একা গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তারা মোটরসাইকেলে করে সেখানে যান। ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে আবদুল কাদের খান, চন্দনসহ সাত আসামিকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। তবে চন্দন কুমার রায় পলাতক ছিলেন। রোববার রাত নয়টার দিকে সাতক্ষীরার ভোমরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। আজ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অন্যরা কাদেরের ব্যক্তিগত সহকারী। শামছুজ্জোহা, চালক আব্দুল হান্নান, গৃহকর্মী মেহেদী হাসান, দূর সম্পর্কের ভাগ্নে ও বাড়ির কেয়ারটেকার শাহীন মিয়া, সাবেক গার্মেন্টস কর্মী আনোয়ারুল ইসলাম রানা। মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কসাই সুবল চন্দ্র রায় অসুস্থ হয়ে কারাগারে মারা যান।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসন থেকে জাতীয় পার্টির আবদুল কাদের খান জয়ী হয়েছেন। এ সময় মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাদেরের ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে জয়লাভ করেন মঞ্জুরুল। চন্দন র্যাবকে জানান, সে সময় কাদেরের ক্ষোভ ও রাজনৈতিক বিরোধের কারণে মঞ্জুরুল ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে তাদের সহযোগী মেহেদী, শাহীন, রানা, শামসুজ্জোহা ও হান্নানকে অস্ত্র পরিচালনা ও হত্যার পর দ্রুত পালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
চন্দন সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৬ সালের শুরুর দিকে তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করেন। র্যাব কর্মকর্তা আল মঈন জানান, বেশ কয়েকটি মামলা থেকে মুক্তি পেতে মঞ্জুরুল ইসলামের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন চন্দন। সহযোগিতা না করায় চন্দন তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
র্যাব জানায়, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে মঞ্জুরুল ইসলামের অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন চন্দন। এ সময় মঞ্জুরুল ইসলামের প্ররোচনায় চন্দন একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ১৯ দিন জেল খাটেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, চন্দনের নামে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ ছিল এবং সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জোহার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুজ্জোহারের সঙ্গে চন্দনের সখ্যতা গড়ে ওঠে। পরে চন্দন ও কাদের খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের হাতে খুন হন মঞ্জুরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চন্দনের ভগ্নিপতি সুবল রায় মঞ্জুরুল ইসলামের বাড়িতে দারোয়ান হিসেবে কাজ করতেন, তাই মঞ্জুরুলের যাওয়া-আসা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া চন্দনের পক্ষে সহজ ছিল। চন্দন মঞ্জুরুলের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে আব্দুল কাদের খানসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য সহযোগীদের তথ্য দিত।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারের পর চন্দন জানায়, ২০১৬ সালের অক্টোবরে ঢাকা থেকে গাইবান্ধা যাওয়ার পথে লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু গাবতলীতে পৌঁছে খুনিরা সেই পরিকল্পনায় সফল হতে পারেনি।