০৯:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

কালুরঘাট সেতু হবে পদ্মা সেতুর মতো

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৬:০৭:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ জুলাই ২০২২
  • / ১১০৮ বার পড়া হয়েছে

bdopennews

কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণে জটিলতা দূর হয়েছে। পদ্মা সেতুর আদলে সেতুটির প্রাথমিক নকশা করা হয়েছে। গাড়ি ছুটবে উপরের তলায় আর ট্রেন চলবে নীচে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর নির্মাণকাজ শুরু হবে। এটি সম্পূর্ণ হতে আরও চার বছর সময় লাগবে। সেতুটি বর্তমান সেতুর ৬০ মিটার উজানে বা উত্তরে নির্মিত হবে। এতে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। আগের প্রস্তাবিত নকশার ব্যয় ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

বুধবার সকালে, ইওসিন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন বা কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এক্সিম ব্যাংকের সহযোগী সংস্থা দোহা সেতুটির অবস্থান, নকশা, ব্যয় এবং নির্মাণের সময় নিয়ে পূর্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রাথমিক প্রস্তাব জমা দেয়।

প্রাথমিক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য গতকাল রেলওয়ে পূর্বের সম্মেলন কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, কালুরঘাট সেতু নির্মাণের ফোকাল পারসন মো. গোলাম মোস্তফাসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কালুরঘাট সেতুটি 1931 সালে কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত হয়েছিল। 636 মিটার দীর্ঘ সেতুটিকে 2001 সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। ট্রেনটি 10 ​​কিলোমিটার গতিতে চলাচল করে। ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী যানবাহনও সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে। ট্রেন চলাচল করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একমুখী যান চলাচলের কারণে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। এছাড়া আগামী বছর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনও চালু হতে পারে। কালুরঘাট সেতুর জন্য এই রেললাইনের সুবিধা আটকে যেতে পারে।

গতকাল বৈঠক শেষে সাংসদ মোসলেম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, নানা জটিলতার কারণে সেতু নির্মাণের বিষয়টি একনেক সভায় উত্থাপিত হয়। তখন নির্মাণ ব্যয় অনেক কম ছিল। কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। কিন্তু এখন সেতু নির্মাণের জটিলতা দূর হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী প্রস্তাবিত নকশায় সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০ মিটার। নদীর বাইরে স্থলপথে থাকবে ৫.৭২ কিলোমিটার। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য হবে ১০০ মিটার। মোট আটটি পিলার থাকবে। সেতুটির উচ্চতা 12.2 মিটার। উপরের ডেকটি হবে রাস্তা এবং নীচের ডেকটি হবে রেললাইন। উভয়ই হবে দ্বিমুখী, অর্থাৎ দ্বিমুখী।

মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জরিপের দায়িত্বে থাকা সংস্থা আগস্টে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তারপর টেন্ডার দেওয়া হবে। নির্মাণকাল প্রায় চার বছর। টেন্ডার শেষ করতে ছয় থেকে আট মাস সময় লাগবে। আগামী বছর কাজ শুরুর ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

সেতুটির জন্য প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) বাংলাদেশ সরকারকে সহজ শর্তে পুরো অর্থ ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের ফোকাল পার্সন কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মোস্তফা।

প্রস্তাবিত নকশার বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু নির্মাণ ব্যয় আগের চেয়ে পাঁচ গুণ বেড়েছে বলে জানান ফোকাল পারসন। গোলাম মোস্তফা বলেন, আগের নকশার সঙ্গে এখনকার নকশা মিলবে না। আগে রেলওয়ে ও সড়ক সেতু ছিল। এখন পদ্মা সেতুর আদলে দ্বিতল সেতুর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের নকশায় সেতুর উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৮ মিটার। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে 12.2 মিটার। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যেহেতু ডিজাইনে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই খরচ বেড়েছে 6,000 কোটি টাকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

কালুরঘাট সেতু হবে পদ্মা সেতুর মতো

আপডেট সময় ০৬:০৭:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ জুলাই ২০২২

কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণে জটিলতা দূর হয়েছে। পদ্মা সেতুর আদলে সেতুটির প্রাথমিক নকশা করা হয়েছে। গাড়ি ছুটবে উপরের তলায় আর ট্রেন চলবে নীচে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর নির্মাণকাজ শুরু হবে। এটি সম্পূর্ণ হতে আরও চার বছর সময় লাগবে। সেতুটি বর্তমান সেতুর ৬০ মিটার উজানে বা উত্তরে নির্মিত হবে। এতে ব্যয় হবে ৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। আগের প্রস্তাবিত নকশার ব্যয় ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

বুধবার সকালে, ইওসিন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন বা কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এক্সিম ব্যাংকের সহযোগী সংস্থা দোহা সেতুটির অবস্থান, নকশা, ব্যয় এবং নির্মাণের সময় নিয়ে পূর্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রাথমিক প্রস্তাব জমা দেয়।

প্রাথমিক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য গতকাল রেলওয়ে পূর্বের সম্মেলন কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, কালুরঘাট সেতু নির্মাণের ফোকাল পারসন মো. গোলাম মোস্তফাসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কালুরঘাট সেতুটি 1931 সালে কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত হয়েছিল। 636 মিটার দীর্ঘ সেতুটিকে 2001 সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। ট্রেনটি 10 ​​কিলোমিটার গতিতে চলাচল করে। ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী যানবাহনও সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করে। ট্রেন চলাচল করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একমুখী যান চলাচলের কারণে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। এছাড়া আগামী বছর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনও চালু হতে পারে। কালুরঘাট সেতুর জন্য এই রেললাইনের সুবিধা আটকে যেতে পারে।

গতকাল বৈঠক শেষে সাংসদ মোসলেম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, নানা জটিলতার কারণে সেতু নির্মাণের বিষয়টি একনেক সভায় উত্থাপিত হয়। তখন নির্মাণ ব্যয় অনেক কম ছিল। কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। কিন্তু এখন সেতু নির্মাণের জটিলতা দূর হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী প্রস্তাবিত নকশায় সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ৬০ মিটার। নদীর বাইরে স্থলপথে থাকবে ৫.৭২ কিলোমিটার। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য হবে ১০০ মিটার। মোট আটটি পিলার থাকবে। সেতুটির উচ্চতা 12.2 মিটার। উপরের ডেকটি হবে রাস্তা এবং নীচের ডেকটি হবে রেললাইন। উভয়ই হবে দ্বিমুখী, অর্থাৎ দ্বিমুখী।

মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জরিপের দায়িত্বে থাকা সংস্থা আগস্টে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। তারপর টেন্ডার দেওয়া হবে। নির্মাণকাল প্রায় চার বছর। টেন্ডার শেষ করতে ছয় থেকে আট মাস সময় লাগবে। আগামী বছর কাজ শুরুর ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।

সেতুটির জন্য প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) বাংলাদেশ সরকারকে সহজ শর্তে পুরো অর্থ ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের ফোকাল পার্সন কর্মকর্তা মোঃ গোলাম মোস্তফা।

প্রস্তাবিত নকশার বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু নির্মাণ ব্যয় আগের চেয়ে পাঁচ গুণ বেড়েছে বলে জানান ফোকাল পারসন। গোলাম মোস্তফা বলেন, আগের নকশার সঙ্গে এখনকার নকশা মিলবে না। আগে রেলওয়ে ও সড়ক সেতু ছিল। এখন পদ্মা সেতুর আদলে দ্বিতল সেতুর প্রস্তাব করা হয়েছে। আগের নকশায় সেতুর উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৮ মিটার। এখন প্রস্তাব করা হয়েছে 12.2 মিটার। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যেহেতু ডিজাইনে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই খরচ বেড়েছে 6,000 কোটি টাকা।