একটি দ্রুতগামী ট্রাকের কাছে ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধে হেরে যান
- আপডেট সময় ০৪:৩৯:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জুলাই ২০২২
- / ১১৪২ বার পড়া হয়েছে
তানছার আলী (৭৫) ৯ মাস আগে ফুসফুসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এরপর তিনি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কেমোথেরাপি চিকিৎসাধীন ছিলেন। কেমোথেরাপি তিন সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। ঈদের আগে থেরাপির তারিখ ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তঞ্চার আলী। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তার ছোট ছেলে ফজলে রাব্বি ওরফে টগর (২৫) ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবার সঙ্গে শনিবার বগুড়ায় আসছিলেন।
তঞ্চার আলীর বাড়ি নওগাঁর ধামুইরহাট পৌর এলাকার জগদল গ্রামে। বন্ধু আবদুর রহমান (৩২) এর ভাড়া করা গাড়িতে তার ছোট ছেলে ফজলে রাব্বি আজ তার সাথে রওনা হয়। আবদুর রহমানের বাড়ি পাশের গ্রামে। আবদুর রহমান ট্রাক কিনতে ভাড়া করা প্রাইভেটকারে বগুড়া যাচ্ছিলেন। সেই গাড়িটি আজ ভোরে রাব্বির বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল এক বন্ধুর অসুস্থ বাবাকে নিতে। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাব্বি তার বাবাকে নিয়ে বন্ধুর ভাড়া করা গাড়িতে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হন। পথে বন্ধু আবদুর রহমান ও আরেক বন্ধু শাকিল গাড়িতে ওঠেন। কিন্তু শহরে কেউ পৌঁছায়নি।
বগুড়া পৌঁছানোর আগে সকাল আটটার দিকে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের কাহালু উপজেলার দরগাহাটের কাছে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় তাদের প্রাইভেটকারটি উল্টে যায়। কাহালু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আম্বর হোসেন প্রথম আলো</em>কে বলেন, ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারের চালক সুমন, যাত্রী তঞ্চার আলী ও তার ছেলে ফজলে রাব্বি নিহত হয়েছেন। গাড়িতে থাকা আব্দুর রহমান ও শাকিলকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুর রহমানকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত তঞ্চার আলী ধামুইরহাট সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। অন্যদিকে তার ছেলে ফজলে রাব্বি কৃষিকাজ করেন। তার বন্ধু একই উপজেলার চক্যাদু গ্রামের আব্দুর রহমান বালু ব্যবসায়ী ছিলেন। প্রাইভেটকার চালক সুমন (৩০) নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার গুচ্ছগ্রামে থাকেন।
দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা নিহত চারজনের মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে নিয়ে যান। মর্গের সামনে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। বাবা তঞ্চার আলী ও ছোট ভাই ফজলে রাব্বি নিহত হওয়ার খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান জাহাঙ্গীর আলম। তিনি জয়পুরহাটের ভুটিয়ামারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাবাকে ২১ দিন পর কেমোথেরাপি নিতে হয়। সে হিসেবে ঈদের আগে থেরাপি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর আজ থেরাপি নিতে বাবার সঙ্গে বগুড়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন ছোট ভাই ফজলে রাব্বি। পথে ট্রাকটি তাদের দুজনকে ছিনিয়ে নেয়।
মৃত ফজলে রাব্বির স্ত্রী সোমা বেগম বলেন, “আমার শ্বশুর ৯ মাস ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে বেঁচে ছিলেন। কিন্তু দানব ট্রাকের কারণে তিনি বাঁচতে পারেননি। আমি অল্প বয়সে আমার স্বামীকে হারিয়েছি। এখন আমার দুই- বছর বয়সী মেয়ে কাঁদছে, বোকা মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে কী বলব?’
আবদুর রহমান বালির ব্যবসা করতেন। ভাড়া করা ট্রাকে বালি সরবরাহের খরচ বেশি ছিল। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে একটি ট্রাক কেনার স্বপ্ন ছিল তার। তার বাবা মফিজ উদ্দিন জানান, আবদুর রহমান ব্যবসার জন্য কিস্তিতে ট্রাক কেনার স্বপ্ন পূরণ করতে ১৮ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন। আজ বগুড়া যাওয়ার জন্য প্রাইভেট কার ভাড়া করেছি। সঙ্গে নিয়েছিলেন ১৮ লাখ টাকা। এক বন্ধু এবং তার অসুস্থ বাবাকেও গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু বগুড়া পৌঁছানোর আগেই সবাইকে হত্যা করা হয়। আব্দুর রহমানের কাছে থাকা ১৮ লাখ টাকা ব্যাগটির হদিস এখনো পাওয়া যায়নি।