আসামে বন্যায় ৬০ জন নিহত, ৩০ লাখেরও বেশি গৃহহীন
- আপডেট সময় ০৩:০৮:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ জুন ২০২২
- / ১১৭২ বার পড়া হয়েছে
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে বন্যায় অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে তিন লাখের বেশি মানুষ। প্রায় সাড়ে চার হাজার গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যা আরও বেশি। মূলত ভারী বৃষ্টির কারণেই এই বন্যা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বন্যার পানি এখন বিভিন্ন নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড বৃষ্টির ফলে বেশ কয়েকটি নদীতে পানি বেড়ে সিলেটে প্রবেশ করছে। এর প্রধান নদী হল উমিয়াম। নদীটি চেরাপুঞ্জির মাশিনরাম শহরে, যেখানে গত শুক্রবার 1003.06 মিমি বৃষ্টি হয়েছিল। চেরাপুঞ্জিতে গড় বৃষ্টিপাত বিশ্বের সর্বোচ্চ, কিন্তু তা সত্ত্বেও গত 50 বছরে মাত্র 3 বার 1000 মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টি হয়েছে।
আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের নদীগুলো প্লাবিত হয়েছে। অরবিন্দ গোস্বামী উত্তর-পূর্ব ভারতের বন্যা নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে এসব নদীতে পলি জমার সমস্যা রয়েছে এবং তা সবসময়ই রয়েছে। পাহাড়ি উপত্যকায় পলি উত্তোলন বেশ ব্যয়বহুল এবং কঠিন। ফলে একদিকে অবিরাম বর্ষণ অন্যদিকে পলি সৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
আসামে ব্রহ্মপুত্রের পানি অনেক জায়গায় উপচে পড়ছে। ব্রহ্মপুত্রের উৎস তিব্বতে। আর্লাং সাম্পো নামে পরিচিত ব্রহ্মপুত্রের প্রায় 80 শতাংশ, ভারতে 30 শতাংশ এবং বাংলাদেশে 10 শতাংশ রয়েছে।
বর্ষাকালে ব্রহ্মপুত্রের একাধিক গুরুতর সমস্যা বোঝা যায়। হিমালয়ের হিমবাহ তিব্বত এবং অরুণাচল প্রদেশে গলে যায়, যেখানে ব্রহ্মপুত্রকে জিয়াং বলা হয়। এতে ব্রহ্মপুত্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার বেশ কয়েকটি নদী বৃষ্টির পানিতে রাতারাতি ফুলে যায়। এছাড়া পলির সমস্যা তো আছেই।
অরিন্দন গোস্বামী বলেন, নদী যখন পাহাড়ে থাকে তখন পলি জমার সমস্যা অনেক কম হয়। এর কারণ হল নদী সেখানে গতি বাড়ে এবং পলি বহন করতে পারে। কিন্তু যত বেশি নদী সমভূমির দিকে প্রবাহিত হয়, তত বেশি পলি জমে। নিয়মিত বেসিন থেকে তোলা দরকার, যা করা হয় না। তিব্বত ও অরুণাচল প্রদেশে নদীতে পলি জমার তেমন সুযোগ নেই, তবে আসাম ও বাংলাদেশে রয়েছে। এ কারণে এ অঞ্চলে নিয়মিত বন্যা হচ্ছে।
এছাড়া এলাকায় বেশ কয়েকটি উপনদী রয়েছে। এর পানি ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা হয়ে আসে এবং সেখান থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সমস্ত সমস্যা বর্ষা এবং বন্যার দিকে পরিচালিত করে।
অরুণাচল প্রদেশ এবং আসামে একাধিক বাঁধ দিয়ে সমস্যা মোকাবেলার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো বড় বাঁধ ও ছোট নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে নদীতে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টায় এর তীব্রতা বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
বন্যা ঠেকাতে ভারত এখন অরুণাচল প্রদেশে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের কথা ভাবছে। তবে তা বাস্তবায়ন করা যাবে কি না, তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। কারণ, ৫০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে প্রস্তাবিত বাঁধ নির্মাণের বিরোধিতা করছেন সেখানকার মানুষ।