০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

আরব আলীর বয়স ৫২ থেকে বেড়ে ৯২, বিচার শেষ হয়নি

নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ১২:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২
  • / ১০৬৫ বার পড়া হয়েছে

bdopennews

আরব আলী 36 বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন যখন তার বয়স ছিল 52 বছর। এ সময় তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়। চাকরিও হারান তিনি।

বছরের পর বছর তিনি ঢাকার বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের বারান্দায় হেঁটেছেন। চাকরি ফিরে পাওয়ার পক্ষে একসময় আদালতের রায় ছিল।

তবে তা হাইকোর্টে আটকে যায়। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আরব আলীর আত্মসাৎ মামলার বিচার হয়নি

সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, আসামি ও বাদী উভয়েরই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এত বছর পরও মামলার বিচার শেষ না হওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক।

বয়সের কারণে রাজধানীর নয়াপল্টনে পরিবার নিয়ে থাকেন নুব্জ আরব আলী। 92 বছরের বৃদ্ধ ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না। কিন্তু মামলার আসামি হিসেবে তাকে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয়।

মামলার বাদী ছাড়াও পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তিন আসামির মধ্যে আরব আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম রয়েছেন। দুই বছর আগে, বিচারে নতুন অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল, শুধুমাত্র আরব আলী এবং তার জীবিত স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে। তবে মনোয়ারা আরও অসুস্থ। আদালতের অনুমতিক্রমে তাকে শারীরিক উপস্থিতি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার পক্ষে আইনজীবীরা নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন।

গত ২৯ মে মামলার শেষ শুনানি হয়। তবে অসুস্থতার কারণে ওই দিন আদালতে হাজির হতে পারেননি আরব আলী। তার পক্ষে আইনজীবী আদালতে আবেদন করেন।

ওই দিন তারা নয়া পল্টনে আরব আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে অসুস্থ দেখতে পান। হাতে ক্যানুলা। ঠিকমতো কথা বলতে পারতো না। আরব আলী সেদিন প্রথম আলো</em>কে বলেন, “আমি খুব অসুস্থ। মামলার কিছুই মনে নেই।”

আরব আলীর ছেলে সৈয়দ আলী আহসান বলেন, “বাবা এমন কিছু ভাবতে পারেন না। মা আরো অসুস্থ

বিচার এত বিলম্বিত কেন জানতে চাইলে আরব আলীর বিরুদ্ধে মামলার পরের বছর ১৯৭৪ সালে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। আদালতও তা আমলে নিয়েছে।

তবে আরব আলী সরকারের অনুমোদন ছাড়াই তার (সরকারি কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। এই বন্দোবস্ত 14 বছর লেগেছিল। হাইকোর্ট মামলাটি খারিজ করে দেন। রাজ্যের আপিলের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি পুনরায় চালু করে। ২০০৪ সালে রায় হলেও ১৩ বছর পর বিষয়টি আদালতের নজরে আনে রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ সময় বাদী, তিন আসামি ও কয়েকজন সাক্ষী মারা যান। এখন আদালত সাক্ষী আনতে বললেও রাষ্ট্রপক্ষ কাউকে হাজির করতে পারেনি।

সেই অভিযোগ আরব আলীর বিরুদ্ধে

আরব আলী 1980 থেকে 1984 সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের ফকিরাপুল শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। আদালতে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক থাকাকালীন আরব আলী 10,000 টাকা স্থানান্তর করেন। পরে তিনি ছয়টি আলাদা চেকের মাধ্যমে অন্যদের সহায়তায় টাকা উত্তোলন করেন। তিনি ‘স্যার হিন্দ ট্রেডার্স’ নামে একটি অস্তিত্বহীন কোম্পানির নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে একটি জাল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলেন। ঋণের বিপরীতে অন্যের স্বাক্ষর জাল করে যন্ত্রাংশ আমদানির নামে ব্যাংক থেকে ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।

রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা কফিলুদ্দিন আশরাফি বাদী হয়ে আরব আলীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় ১৯৮৪ সালের ১২ আগস্ট মামলা করেন। তার দুই স্ত্রী ছাড়াও অপর দুই আসামি শাহাদাত হোসেন ও ওজিউল্লাহ আরব আলীর পরিচিত। তারা সবাই নোয়াখালীতে থাকেন।

১৯৮৫ সালের ৩০ মার্চ এই মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন ব্যুরো চার্জশিট দাখিল করে। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। গ্রেফতারের পর আরব আলী জামিন পান।

যেভাবে বিচার ঝুলে থাকে

আদালত 24 এপ্রিল, 1985 সালে আরব আলীসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আমলে নেয়। আরব আলী এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। হাইকোর্টের তরফে তাঁকে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও সরকারী অনুমোদন ছাড়াই আরব আলীর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ আদালত আমলে নিয়েছে, যা আইনসম্মত নয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয় যে আরব আলীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাই তার বিচারের জন্য সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।

পরে ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর আরব আলীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর আরব আলী ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে ফৌজদারি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। এরপর তাকে আদালতে বলা হয়, তিনি বরখাস্তের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে দেওয়ানি আদালতে মামলা করেছেন। পরবর্তীতে, 1990 সালে, দেওয়ানী আদালত আরব আলীর বরখাস্তের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে। ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করতে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে ওই সময় দেওয়ানি আদালতের রায় স্থগিত করেননি আদালত।

এদিকে, মামলা বাতিল চেয়ে আরব আলীর হাইকোর্টে আপিলের সিদ্ধান্ত হয় 2 জুলাই, 1997। রায়ে বলা হয় যে আরব আলী এখনও পদে আছেন। বিচারিক আদালত

নিউজটি শেয়ার করুন

আরব আলীর বয়স ৫২ থেকে বেড়ে ৯২, বিচার শেষ হয়নি

আপডেট সময় ১২:৪৮:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জুন ২০২২

আরব আলী 36 বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন যখন তার বয়স ছিল 52 বছর। এ সময় তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়। চাকরিও হারান তিনি।

বছরের পর বছর তিনি ঢাকার বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টের বারান্দায় হেঁটেছেন। চাকরি ফিরে পাওয়ার পক্ষে একসময় আদালতের রায় ছিল।

তবে তা হাইকোর্টে আটকে যায়। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আরব আলীর আত্মসাৎ মামলার বিচার হয়নি

সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, আসামি ও বাদী উভয়েরই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এত বছর পরও মামলার বিচার শেষ না হওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক।

বয়সের কারণে রাজধানীর নয়াপল্টনে পরিবার নিয়ে থাকেন নুব্জ আরব আলী। 92 বছরের বৃদ্ধ ঠিকমতো হাঁটতেও পারেন না। কিন্তু মামলার আসামি হিসেবে তাকে নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয়।

মামলার বাদী ছাড়াও পাঁচ আসামির মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তিন আসামির মধ্যে আরব আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম রয়েছেন। দুই বছর আগে, বিচারে নতুন অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল, শুধুমাত্র আরব আলী এবং তার জীবিত স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে। তবে মনোয়ারা আরও অসুস্থ। আদালতের অনুমতিক্রমে তাকে শারীরিক উপস্থিতি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তার পক্ষে আইনজীবীরা নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন।

গত ২৯ মে মামলার শেষ শুনানি হয়। তবে অসুস্থতার কারণে ওই দিন আদালতে হাজির হতে পারেননি আরব আলী। তার পক্ষে আইনজীবী আদালতে আবেদন করেন।

ওই দিন তারা নয়া পল্টনে আরব আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে অসুস্থ দেখতে পান। হাতে ক্যানুলা। ঠিকমতো কথা বলতে পারতো না। আরব আলী সেদিন প্রথম আলো</em>কে বলেন, “আমি খুব অসুস্থ। মামলার কিছুই মনে নেই।”

আরব আলীর ছেলে সৈয়দ আলী আহসান বলেন, “বাবা এমন কিছু ভাবতে পারেন না। মা আরো অসুস্থ

বিচার এত বিলম্বিত কেন জানতে চাইলে আরব আলীর বিরুদ্ধে মামলার পরের বছর ১৯৭৪ সালে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। আদালতও তা আমলে নিয়েছে।

তবে আরব আলী সরকারের অনুমোদন ছাড়াই তার (সরকারি কর্মকর্তা) বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। এই বন্দোবস্ত 14 বছর লেগেছিল। হাইকোর্ট মামলাটি খারিজ করে দেন। রাজ্যের আপিলের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি পুনরায় চালু করে। ২০০৪ সালে রায় হলেও ১৩ বছর পর বিষয়টি আদালতের নজরে আনে রূপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ সময় বাদী, তিন আসামি ও কয়েকজন সাক্ষী মারা যান। এখন আদালত সাক্ষী আনতে বললেও রাষ্ট্রপক্ষ কাউকে হাজির করতে পারেনি।

সেই অভিযোগ আরব আলীর বিরুদ্ধে

আরব আলী 1980 থেকে 1984 সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের ফকিরাপুল শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। আদালতে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক থাকাকালীন আরব আলী 10,000 টাকা স্থানান্তর করেন। পরে তিনি ছয়টি আলাদা চেকের মাধ্যমে অন্যদের সহায়তায় টাকা উত্তোলন করেন। তিনি ‘স্যার হিন্দ ট্রেডার্স’ নামে একটি অস্তিত্বহীন কোম্পানির নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে একটি জাল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খোলেন। ঋণের বিপরীতে অন্যের স্বাক্ষর জাল করে যন্ত্রাংশ আমদানির নামে ব্যাংক থেকে ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।

রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা কফিলুদ্দিন আশরাফি বাদী হয়ে আরব আলীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় ১৯৮৪ সালের ১২ আগস্ট মামলা করেন। তার দুই স্ত্রী ছাড়াও অপর দুই আসামি শাহাদাত হোসেন ও ওজিউল্লাহ আরব আলীর পরিচিত। তারা সবাই নোয়াখালীতে থাকেন।

১৯৮৫ সালের ৩০ মার্চ এই মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন ব্যুরো চার্জশিট দাখিল করে। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। গ্রেফতারের পর আরব আলী জামিন পান।

যেভাবে বিচার ঝুলে থাকে

আদালত 24 এপ্রিল, 1985 সালে আরব আলীসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আমলে নেয়। আরব আলী এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। হাইকোর্টের তরফে তাঁকে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও সরকারী অনুমোদন ছাড়াই আরব আলীর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ আদালত আমলে নিয়েছে, যা আইনসম্মত নয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয় যে আরব আলীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাই তার বিচারের জন্য সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।

পরে ১৯৭৫ সালের ৪ নভেম্বর আরব আলীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর আরব আলী ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে ফৌজদারি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। এরপর তাকে আদালতে বলা হয়, তিনি বরখাস্তের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে দেওয়ানি আদালতে মামলা করেছেন। পরবর্তীতে, 1990 সালে, দেওয়ানী আদালত আরব আলীর বরখাস্তের আদেশকে অবৈধ ঘোষণা করে। ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করতে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে ওই সময় দেওয়ানি আদালতের রায় স্থগিত করেননি আদালত।

এদিকে, মামলা বাতিল চেয়ে আরব আলীর হাইকোর্টে আপিলের সিদ্ধান্ত হয় 2 জুলাই, 1997। রায়ে বলা হয় যে আরব আলী এখনও পদে আছেন। বিচারিক আদালত